Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সাফল্য গাঁথা

স্বপ্ন হলো সত্যি
গ্রামের নাম খঞ্জনমারা। এ গ্রামেরই কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম। কৃষক বললে ভুল হবে। কেননা, ২০ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে  ঢাকা শহরে গিয়েছিলেন রিকশা চালাতে। রিকশা চালিয়েছেন ঢাকা, গাজীপুর, আবদুল্লাপুর, মাওয়া, সিরাজদিখান এমনকি খাগড়াছড়ি জেলাতেও।  প্রথমে দিনে গড়ে ৩০০ টাকা আয় হলেই খুশি হতেন। পরে সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা এসব নিয়ে হিমশিম খেতেন। ১৫ দিন পর যা আয় হতো- তা নিয়ে বাড়ি আসতেন। মাসখানেক থাকার পর ৫০০/১০০০ টাকা যখন ঋণ হয়ে যেত- তখন আবার বেড়িয়ে পড়তেন পেটের তাগিদে। এভাবেই  কেটে গেছে আরও ২০ টি বছর। এখন বয়স প্রায় ৪০ বছর। পা আর চলে না। তাই রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের খঞ্জনমারা গ্রামে ২০১৩ সালে গ্রামে ফিরে আসেন।
গ্রামে ফিরেই সে বছর চেষ্টা করেন পরিত্যক্ত ৩০ শতকের একটি জলাশয়ে মাছ চাষের। কিন্তু এ বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নাই। পরবর্তী বছর ২০১৪ সালটি তার জন্য স্মরণীয়। কেননা, এ বছরটি তার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ বদলে দেয়। সেপ্টেম্বর মাসে আইএপিপি প্রকল্পের আওতায় যে মৎস্য দল গঠিত হয় সে দলের একজন সদস্য হয়ে যান রফিকুল ইসলাম। ১০টি  সেশনে অংশ নেন। দীক্ষা নেন তেলাপিয়া, কৈ আর কার্প জাতীয় মাছ চাষের। একইসাথে স্বল্প সময়ে অধিক লাভের জন্য  নার্সারির বিষয়টিও তার পছন্দ হয়। তার গভীর মনোযোগ আর আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রেখে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ তার পুকুরে স্থাপন করেন একটি থাই কৈ প্রদর্শনী।  খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় ৬৩০০০ টাকা। এজন্য মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে তাকে শ্রেষ্ঠ কৃষক হিসেবে পুরস্কৃতও করা হয়। এটিই ছিল মূলত টার্নিং পয়েন্ট।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালে তার আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রেখে আইএপিপি প্রকল্প তাকে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য  গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিএফআরআই) আইএপিপির অর্থায়নে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রেরণ করেন। রফিকুল ইসলাম সেখানে গিয়ে গুণগত মানের পোনা উৎপাদন কৌশল ও পোনার উৎস্য খুঁজে পান। একইসাথে সুলভে খাদ্য তৈরির বিষয়টি ভাবতে ভাবতে খাদ্য তৈরির মেশিন  কেনা যায় কিভাবে সে বিষয়টি তাকে আলোড়িত করে। জীবনের ফিকে স্বপ্নগুলো রঙিন হতে শুরু করে। পৈতৃক জমি সম্বল ছিল ২ শতক। বিক্রি করেন  ৫০,০০০ টাকা। মহাজনের কাছ থেকে মাসিক ১০,০০০ টাকা সুদে ঋণ নেন ১,০০,০০০ টাকা। আর নিজের কাছে যৎসামান্য সঞ্চয়  এ হলো তহবিল। প্রায় ১,৬,০০০০ টাকা খরচ করে কিনে ফেলেন খাদ্য তৈরির মেশিন। মিক্চার মেশিন, শ্যালো মেশিন, পাউডার তৈরি মেশিন, বস্তা  শেলাই মেশিন, বেল্ট, চেচিস, মেঝে পাকাকরণ- এ যেন স্বপ্নকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে নতুনরূপে রূপদানের এক মহাযজ্ঞ।
জুন ২০১৬। শুরু করেন দানা জাতীয় ও পাউডার জাতীয় খাদ্য উৎপাদন। প্রতি কেজি দানাদার খাদ্য তৈরি করতে তার খরচ প্রায় ২৫  টাকা, বিক্রি করেন ৩০ টাকা। অন্যদিকে পাউডার জাতীয় খাদ্য তৈরিতে খরচ প্রায় ৩০ টাকা- যা বিক্রি করেন ৪২ টাকা। বাজারের তুলনায় মূল্য কেজিতে প্রায় ১০-১৫ টাকা কম হওয়ায় স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মৎস্য  চাষিরা ধীরে ধীরে তার নিকট ভিড় জমাতে শুরু করেন। অল্প ক’দিনেই পরিচিতি বাড়ে। তাই ব্যবসায়ীরাও তার খাদ্য নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু লাইসেন্স না থাকায় তিনি  দিতে পারছেন না। এ যাবৎ অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ২-৩ মেট্রিক টন খাদ্য বিক্রি করেছেন- যা দিয়ে মহাজনের ধার শোধ করেছেন প্রায় ৭০,০০০  টাকা। পাশাপাশি মৎস্য চাষ, নার্সারি কার্যক্রমসমূহও চালু রেখেছেন। সেপ্টেম্বর/১৬ মাসের শেষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রায়  ২০,০০০ গিফট্ জাতের তেলাপিয়ার ছোট পোনা নিয়ে এসেছেন। তার আশা, ডিসেম্বরে কেজিতে ৫-৬টি আসা মাত্রই তিনি তা বাজারে বিক্রি করবেন। এখান থেকে ১,৩০,০০০ টাকা খরচ করে প্রায় ৩,০০,০০০ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন রফিকুল ইসলাম।
শুরু হলো দিন বদলের পালা। এরই মধ্যে বাড়ির চারপাশে পাট খড়ির বেড়া পাল্টিয়ে টিনের বেড়া দিয়েছেন। একটি গেট নির্মাণ করেছেন।  পুষ্টি তালিকায় যোগ হয়েছে মাছ-মাংস। পোশাক-পরিচ্ছদ আগের চেয়ে উন্নত। তার ভাষায় ‘আগের কথা মনে হইলে-চোহে পানি চইলা আসে। বড় মাইয়াটা ভালা ছাত্রী ছিল। ফাইভে-এইটে বৃত্তি পাইছিল। অথচ টাকার জন্যি ভালো মাস্টার দিবার পারি নাই। মাইয়াডা কষ্ট নিয়া  রৌমারী কলেজে ডিগ্রি পড়তাছে। ‘তার ছোট মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়েন। তাকে নিয়েও তার স্বপ্ন অনেক। তিনি বলেন ‘আর মাত্র ৩ কিস্তি,  মহাজনের টাকা শোধ হইয়া গেলে দায়মুক্ত। তহন মাইয়া দুইটার যত সাধ সব পূরণ করুম। ‘ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টিভিটি প্রজেক্ট  এবং মৎস্য অধিদপ্তরের নিকট কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন ‘বাড়ি ফিরা আমি যহন নিঃস্ব, হতাশ তহন আইএপিপি আমার পাশে আইসা দাঁড়াইছে এবং বদলাইয়া দিছে আমার জীবন।’
রফিকুল ইসলাম ভবিষ্যতে বড় একটি খাদ্য তৈরির কারখানা দিতে চান। কারণ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সেক্টরে এ খাদ্যের চাহিদা বিপুল। আর  রৌমারীর মতো জায়গায় বড় কারখানা মানে অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান। তার মতো আর কোনো রফিকুল বাহিরে গিয়ে রিকশা চালাক-  সেটি তার কাম্য নয়।
তাই তিনি চান আর দশটি কোম্পানির মত তার পণ্যও বাজারে বিক্রি হবে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডে। এজন্য তিনি লাইসেন্সের আবেদন করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের নিকট। আর প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছেন আদরের দুই মেয়ে রুজিনা-রিনার নামে।

মো. সিরাজুল ইসলাম*
*সাবেক জেলা সমন্বয়কারী, আইএপিপি, কুড়িগ্রাম

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon